এসএম রুবেল সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ ইউসুফ রাজার বিরুদ্ধে একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছাত্র রাজনীতির আড়ালে কিশোর-তরুণদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি স*ম*কা*মি*তা করে আসছেন।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুরের মৃত হিফাজুল ইসলামের ছেলে স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ রাজা ,২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও। ২০১৬ সালে তাকে সদর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদেও আসীন হন। তবে, তার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মধ্যে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পিটিআই শান্তি নিবাস মেসে অবস্থানকালে এক ছাত্রকে ব*ল*ৎকা*রের চেষ্টা করেন ইউসুফ রাজা। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার অনৈতিক কর্মকান্ড ধামাচাপা পড়ে থাকে অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকি দেন। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শান্তি নিবাস মেস কর্তৃপক্ষ তার সিট বাতিল করে তাকে বের করে দেয়।
এ ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সদস্যরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, ২০১৯ সালে ঘটে যাওয়া শান্তিনিবাস মেসের ঘটনায় আমরা সরাসরি উপস্থিত ছিলাম তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় মেস থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোন নেতাকর্মী এরকম কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকা কাম্য নয়। যদি সত্যি এমন কিছু হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে নেতৃবৃন্দকে গণমাধ্যম কর্মীরা অবগত করলে তারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব মোঃ সাদ্দাম হোসেন কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানি ইউসুফ রাজা সম*কামি*তা_র সাথে সরাসরি জড়িত যা ছাত্রদলের জন্য চরম হুমকি ও অপমানজনক তিনি আরও বলেন এছাড়াও যে তিনি দীর্ঘদিন লাইট হাউস বিনামূল্যে কনডম বিতরণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। ছাত্রদের কল্যাণের বদলে কিশোর-তরুণদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেন। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন স্থানে তরুণদের নিয়ে অস্বাভাবিক কার্যকলাপে জড়ানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ইউসুফ রাজার বিরুদ্ধে ওঠা আসা অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে ইউসুফ রাজা বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যে প্রণোদিত যা বর্তমান আমাকে নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হেয় করার চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম জানান, এমন কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি এবিষয়ে কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে অবগত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবো।
অনুসন্ধানে তার কিছু যৌ*ন সংক্রান্ত স*ম*কা*মি*তা*র স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে তিনি তরুণদের সঙ্গে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। এসব স্ক্রিনশট বিশ্লেষণ করলে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা আরও স্পষ্ট হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, এসব তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রশাসনের তদন্ত প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহলের নাগরিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এক নেতা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কড়া ভাষায় বলেন, “ইউসুফ রাজার কর্মকাণ্ড ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছে। ছাত্রদল কখনোই এ ধরনের অনৈতিক ও বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তিকে সমর্থন করে না। যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কার করা উচিত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্র রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রকে কলুষিত করা হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাই প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলের উচিত, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে সচেতন মহলের লোকজন আরও দাবি করেন শুধু ইউসূফ রাজার মত আরও এ ধরনের নোংরা কার্যকলাপে জড়িত থাকা ব্যক্তিবর্গের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে সঠিক পথে দেশ পরিচালনা করা দায়িত্বগতদের হস্তক্ষেপ ইতিমধ্যেই জরুরী।